Saturday, February 7, 2015

ইংরেজি ভাষা শিক্ষার বিকল্প নেই

ইংরেজি ভাষা শিক্ষার বিকল্প নেই
একটি মিথ দিয়ে আজকের লেখা শুরু করতে যাচ্ছি। আশা করি উদ্ধৃত মিথ দ্বারা পাঠক যেমন বাস্তবতা উপলব্ধি করবেন, তেমনি লেখার উদ্দেশ্যও কিছুটা সফল হবে। সময়টা ছিল বৃটিশদের শাসনের সময়। একজন বৃটিশ সাহেব ভারতীয় উপসমহাদেশে তাদের কোনও একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য তদন্তে আসলেন। যে প্রতিষ্ঠানটি বৃটিশরা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে, তা জনস্বার্থবিরোধী; তাই মুসলমানরা তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনে ও জনমত তৈরির চেষ্টাও করেছিলেন। নির্দিষ্ট তারিখে বৃটিশ সাহেব তার বিশাল বাহিনী নিয়ে গন্তব্যে রওনা হলেন। কিন্তু পথিমধ্যে মুসলমানরা তার পথরোধ করলেন। ইংরেজ সাহেব মুসলমানদের কাছে তাদের দাবির কথা জিজ্ঞাসা করল। 

কিন্তু মুসলমনরা তার ভাষা না বুঝতে পারায় কেবল সোগান দিতে লাগল এবং শরীরী ভাষায় তারা গলার কাছে হাত উত্তোলন করল। বৃটিশ সাহেবের সঙ্গে যে দোভাষি ছিলেন তিনি মুসলিমবিরোধী। বৃটিশ সাহেব দোভাষির কাছে মুসলমানদের দাবি এবং গলার কাছে হাত উত্তোলন করার প্রকৃত কারণ জানতে চাইলেন। কিন্তু কপট দোভাষি প্রকৃত কারণ না বুঝিযে বললেন মুসলমানরা আপনাকে হত্যা করতে অর্থাৎ তারা আপনার গলা কেটে ফেলতে চায়। বৃটিশ সাহেব খুব রেগে গেল এবং তার সঙ্গে থাকা পুলিশ বাহিনীকে মুসলমানদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিলেন। সেদিন পুলিশের গুলিতে শত শত মুসলমানের জীবনহানি হয়েছিল। মূল দৃশ্য ছিল, মুসলমানরা তাদের গলার কাছে হাত উত্তোলন করে সাহেবকে বুঝাতে চেয়েছিল তারা জীবন দিতে রাজি, কিন্তু জনস্বার্থবিরোধী কোনও কাজ হতে দেবে না, অন্যদিকে দোভাষি মুসলমাদের ভাষাজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে সাহেবকে বুঝিয়েছিল ভিন্ন। কেবল বৃটিশদের ভাষা না জানার কারণে সেদিন অসংখ্য মুসলমানকে জীবন দিতে হয়েছিল। ইংরেজি ভাষা না শেখায় মুসলমান প্রাপ্য অধিকার থেকে সরাসরি বঞ্চিত হয়েছিল।
ইংরেজি ভাষা শিক্ষার প্রতি বৈরাগ্যভাবাপন্ন থাকায় বৃটিশামলে মুসলামনরা প্রায় অবহেলিত ছিল। রক্ষণশীল মুসলমানরা ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকে মুসলমানদের জন্য হারাম ঘোষণা করেছিল। যে কারণে মুসলমানরা ইংরেজি শিক্ষার ছায়াও মাড়াত না। এমনকি যেসব স্কুলে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দেয়া হতো, সেসব প্রতিষ্ঠানকে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে অপবিত্র স্থান মনে করত। বৃটিশদের ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দুরা যখন ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্মানীয় পদবিতে চাকরি করত, তখন মুসলমানরা কেবল ইংরেজি শিক্ষাবিমুখ থাকায় বিভিন্নস্থানে কর্মচারী বা ভৃত্যের কাজ করত। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে হিন্দুরা যখন বৃটিশদের আস্থাভাজনে পরিণত হয়েছিল, তখন মুসলমানরা বৃটিশদের কাছে ছিল চরম অবহেলিত। মুসলমানদের এ বেহালদশা উপলব্ধি করে স্যার সৈয়দ আমীর আলী ও স্যার সলিমুল্লাহ মুসলমানদের নেতৃত্ব দিয়ে তাদের সম্মানের স্থান ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হলেন। তারা মুসলমান ছেলে-মেয়েদের জন্য ইংরেজি শিক্ষা নিশ্চিত করতে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করলেন এবং মুসলমানদের মধ্যে পুঞ্জিভূত কুসংস্কার দূরীভূত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালালেন। একসময় মুসলামনরাও তাদের ভুল বুঝতে পেরে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি ঝুঁকলেন; তবে সময়ের সিদ্ধান্ত যথাসময়ে না নেয়ায় মুসলমানদের অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল।
আজ বৃটিশদের শাসন নেই, কিন্তু বিশ্বায়ন আছে। বৃটিশরা এ উপমহাদেশ থেকে বিতারিত হলেও তাদের ভাষাই আজ আন্তর্জাতিক ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। পৃথিবীজুড়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সাধারণভাবে কেবল ইংরেজি ভাষাই ব্যবহার হচ্ছে। কেউ মাতৃভাষা রূপে আবার কেউ দ্বিতীয় প্রধান ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করছে। ইংরেজি ভাষা জানা থাকলে গোটা বিশ্ব ঘুরে আসতে কোনও সমস্যা হয় না। সব দেশের মানুষ কমবেশি ইংরেজি ভাষা জানায় সবার সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রক্ষার্থে ইংরেজি ভাষা আজ আমাদের জন্য বড় বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মাতৃভাষার পরেই দ্বিতীয় গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজি ভাষা শিখছি; কিন্তু বিদেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় আমাদের সে শিক্ষা পদ্ধতি কতটুকু সহায়ক হচ্ছে? শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শেষ ক্লাস অবধি আমাদের পাঠ্যক্রমে কমবেশি ইংরেজি ভাষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তবে সেটা ভাষার লেখ্য রূপ। প্রতিটি ভাষারই প্রধানত দুটি রূপ থাকে। একটি লেখ্য অন্যটি কথ্য। দুটোই গুরুত্বপূর্ণতবে পরস্পরিক যোগাযোগের জন্য ভাষার কথ্য রূপটি খুব জরুরি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে যেভাবে সাজানো হয়েছে, তাতে ভাষার কথ্য দিকটি প্রায় উপেক্ষা করা হয়েছে। মাতৃভাষা হিসেবে আমরা বাংলাতে খুবই পরাঙ্গম এবং অনর্গল বাংলাভাষা ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি। কিন্তু বাংলাভাষা নিয়ে দেশের বাইরে এক পা ফেলারও কি উপায় আছে? বাঙালী ছাড়া বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জাতির নিজস্ব মাতৃভাষা থাকার পরেও তারা সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য ইংরেজি ভাষা শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। পৃথিবীর বয়স যতই বাড়ছে, ততই দেশের সীমানা সঙ্কুচিত হচ্ছে। ভাবা হচ্ছে, মাত্র শ’খানেক বছর পর বিশ্বের মধ্যে আলাদা আলাদা কোনও সীমানা থাকবে কিনা, সন্দেহ। বিশ্বায়নের প্রভাবে সে আলামতের কিছুটা প্রকাশ পেতেও শুরু করেছে। বিশ্বায়নের কল্যাণে বিশ্বের বহু দেশ আজ একই ছাদের ছায়ায় অবস্থান করছে। সংস্কৃতি, ব্যবসা থেকে শুরু করে সবকিছুর পরিবর্তন ঘটছে। সবাই সবকিছু ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। আমরাই শুধু পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে কেবল যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারার ব্যর্থতাই দায়ী।
সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন আন্তর্জাতিক জীবন থেকে পারিবারিক জীবন পর্যন্ত অর্থাৎ জীবনের সর্বত্র ইংরেজি ভাষার ব্যবহার হবে। বর্তমানে তার লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। ছাত্রজীবনে যিনি ইংরেজি ভালো বলতে কিংবা লিখতে পারেন, তিনি ছাত্রজীবন সমাপান্তে ভালো ভালো চাকরিতে সুযোগ পাচ্ছেন। যে ব্যবসায়ী ভালো ইংরেজি জানেন, তিনি ব্যবসায় উন্নতি করছেন। আজ জীবনের কোনও অংশটি ইংরেজি ছাড়া চলে? ন্যায়বিচার পেতে হলেও যেমন ইংরেজি দরকার, তেমনি উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে হলেও ইংরেজি প্রয়োজন। ইংরেজিকে এড়িয়ে যাবার কি কোনও উপায় আছে? শুধু ছাত্রের কথাই যদি বলা হয় তবে দেখা যাবে, ছাত্রদের জন্যই সবচেয়ে বেশি ইংরেজি জানা দরকার। শিক্ষাজীবনের অভ্যন্তরীণ লক্ষ্য যাই হোক না কেন, বাহ্যিক লক্ষ্য নিশ্চয়ই ভালো চাকরি পাওয়া। প্রশ্ন হলো, ভালো চাকরি পাবেন কে? যিনি গতানুগতিকভাবে শিক্ষা জীবন শেষ করেছে এবং অনেকগুলো সার্টিফিকেট অর্জন করেছে তিনি না যিনি গতানুগতিক শিক্ষা ও সার্টিফিকেট অর্জনের সঙ্গে সােঙ্গ ইংরেজি ভাষাকে ভালোভাবে রপ্ত করেছে তিনি? দেশের চাকরির বাজার, চাকরি দাতাদের চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের দাবি অনুযায়ী দ্বিতীয় শর্ত অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সার্টিফিকেটের সঙ্গে ইংরেজিতে দক্ষ হলে তার চাহিদা সর্বত্র। সার্টিফিকেটকে চাকরি প্রাপ্তির জন্য আবেদন করার স্বীকৃতি বলা যেতে পারে; কিন্তু চাকরির বাজারে প্রবেশের চাবি অবশ্যই ইংরেজিতে সুদক্ষ হওয়া। সিদ্ধান্তে বলা যায়, ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য সার্টিফিকেটের প্রয়োজন যতটা তার চেয়ে ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার গুরুত্ব কোনও অংশে কম নয়। শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যেতে চাইলেও ইংরেজি জানা আবশ্যক। একজন ইংরেজি ভাষা না জানা শ্রমিক যে টাকা মাইনে পান তার চেয়ে বহুগুণ বেশি মাইনে পান একজন ইংরেজি ভাষা জানা শ্রমিক। দুজন শ্রমিকেরেই কাজ করার যোগ্যতা সমান হওয়ার পরও এটাই বাস্তবতা। ইংরেজি ভাষা জানা ছাড়া আজকের দুনিয়ায় মানুষকে অন্ধ হয়েই চলতে হয়। এ আবার যেমন-তেমন অন্ধ নয়, বরং কানে বধির, চোখে অন্ধ এবং মুখে বোবা। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে ইংরেজি ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবা সত্যিই অসম্ভব।
বাঙালীদের জন্য ইংরেজি ভাষা শিক্ষা এতটা সহজ নয় যতটা সহজ বাংলা। ছাত্রত্বের সুবাদে কমবেশি ইংরেজি আমরা প্রত্যেকেই জানি; কিন্তু সমস্যা বাধে বলার সময়। যেন গলা পর্যন্ত এসে আটকে যায়। ইংরেজি ভাষা শিক্ষার জন্য চর্চার কোনও বিকল্প নেই। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাকাঠামো অনুযায়ী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি বলতে শেখা প্রায় অসম্ভব।
কাজেই যেসব সরকারি কিংবা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে শেখায় তাদের দ্বারস্থ হতে হবে। এখানে প্রতিষ্ঠান বড় কি ছোট তা বিবেচনা করা মুখ্য নয়; বরং যিনি ইংরেজি শেখাচ্ছেন তিনি কতটা যোগ্য ও দক্ষ সেটাই বিবেচ্য। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা ইংরেজি শেখানোর নামে দৃষ্টিনন্দন এবং শ্রুতিমধুর কিছু বিজ্ঞাপনের ভাষা ব্যবহার করত একপ্রকার অর্থনৈতিক ডাকাতি করে। কাজেই শিক্ষার্থীদের সচেতন হয়ে যাচাই-বাছাই করে ইংরেজি শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান বাছাই করা উচিত। মোটকথা, জীবনে চলার পথে ইংরেজি লাগবেই, সুতরাং দেরি না করে এবং ব্যস্ততা আসার আগেই ইংরেজি শিখে নেয়া উচিত। ভবিষ্যৎ জীবনে অন্ধকার দেখতে না চাইলে এবং সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করতে চাইলে ইংরেজির বিকল্প আর কিছু নেই। এক্ষেত্রে শুধু বলা যায়, ইংরেজির বিকল্প কেবল ইংরেজিই হতে পারে।
রাজু আহমদ 

No comments:

Post a Comment

হাদীস সংকলনের ইতিহাস ও হাদীসের কথা

হাদীস সংকলনের ইতিহাস  ও হাদীসের কথা আজ আপনাদের সামনে হাদিসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে হাজির হয়েছি। একটি হল হাদীস সংকলনের ইতিহাস এবং অন্যটি ...